আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের‘হাইব্রিড, ‘কাউয়া’ ও ‘ফার্মের মুরগি’ আখ্যায়িত করে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে
দেওয়া বক্তব্যের কারণে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক, পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বেশ আলোচিত হয়ে উঠেছেন। আবার এসব বিশেষণের কারণে তিনি ক্ষেত্র বিশেষে সমালোচিতও হয়েছেন। নব্য ও সুবিধাভোগী আওয়ামী লীগারদের উদ্দেশে এসব বিশেষণ দেওয়া হলেও শব্দ ও ভাষা প্রয়োগের ব্যাপারে তার আরও সংযত হওয়া উচিত বলে মনে করেন দলের অনেক কেন্দ্রীয় নেতা।
ওবায়দুল কাদেরের দেওয়া এসব বক্তব্য নিয়ে ফেইসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। পাশাপাশি দলের অনেক কেন্দ্রীয় নেতাও কাদেরের এসব নেতিবাচক বিশেষণকে সমালোচনার চোখে দেখছেন। এই বিশেষণগুলো নেতাদের ক্ষুব্ধ করলেও দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা হওয়ায় প্রকাশ্যে কাদেরের বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না তারা। তবে নিজেদের মধ্যকার আলোচনায় এনিয়ে খেদোক্তি প্রকাশ করতে দেখা গেছে। অনেকেই আবার এসব বক্তব্যের সঙ্গে একমত হলেও শব্দ ও ভাষার ব্যবহারে কাদেরের আরেকটু যত্নশীল হওয়া দরকার বলে মনে করেন।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে, তিনি পরে কথা বলবেন বলে ফোন রেখে দেন।
দলের ভেতরে হাইব্রিড বিশেষণটি অনেকদিন ধরেই চলে আসছিল। ওবায়দুল কাদের এরসঙ্গে নতুন করে যোগ করলেন কাউয়া ও ফার্মের মুরগি। আর এ দুটো বিশেষণই দলের নেতাদের বেশি আহত করেছে। দলের অনেক নেতা এই বিশেষণগুলোকে নিয়ে রঙ্গ-রস করে স্ট্যাটাসও দিয়ে যাচ্ছেন অনবরত। সভাপতি ও সম্পাদকমণ্ডলীর একাধিক নেতা বলেন, ওবায়দুল কাদেরের এসব বিশেষণ আওয়ামী লীগ বিরোধী অংশকে সমালোচনার সুযোগ করে দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে থাকা অবস্থায় কেউ দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে এমন নেতিবাচক মন্তব্য করলে, তা সমালোচকদের হাতে সুযোগ তৈরি করে দেওয়া ছাড়া আর কী হতে পারে। তারা বলছেন, তিনি তো সাধারণ সম্পাদক। দলীয় ফোরামে এ নিয়ে আলোচনা করে তিনি ব্যবস্থা নিতে পারেন।তার সেই এখতিয়ার আছে। এগুলোতো বাইরে বলার মতো কথা নয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের যে সেন্সে এসব বিশেষণ দিয়েছেন, এ নিয়ে তার সঙ্গে আমার দ্বিমত নেই।’ তিনি বলেন, ‘ভাবগত জায়গা থেকে এসব সত্যি কথা। তবে ভাষাগত ক্ষেত্রে আরও একটু সতর্ক থাকা উচিত।’ জাফরউল্যাহ বলেন, ‘সত্যিই আওয়ামী লীগে অনেক নব্যরা ঢুকে গেছেন।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ ও আব্দুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এসব কথা সাধারণ সম্পাদক বলেছেন। এগুলো কাকে উদ্দেশ করে বলেছেন, কেন বলেছেন তা উনিই ভালো বলতে পারবেন।’
সম্পাদকমণ্ডলীর একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এসব বিশেষণ দলের নেতাকর্মীদের ছোট করছে। এত বড় একজন নেতা এত সস্তা বক্তব্য দেবেন কেন?’ তিনি বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের হয়তো ঠিকই বলছেন। কিন্তু শব্দ চয়ন নেতিবাচক হওয়ায় বিশেষণগুলো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরকে সবার কাছে হেয় করছে।
হাইব্রিড, কাউয়ার পরে সর্বশেষ গত সোমবার মেহেরপুরে মুজিবনগর সরকার দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগে ফার্মের মুরগি ঢুকেছে।দেশি মুরগি দরকার, ফার্মের মুরগি নয়। ফার্মের মুরগি স্বাস্থ্যের জন্যে ভালো নয়। চারদিকে আতি নেতা পাতি নেতায় ভরে গেছে।’
এর আগে গত ২২ মার্চ সিলেটে একটি অনুষ্ঠানে সংগঠনে ‘কাউয়া ঢুকেছে’ বলে মন্তব্য করেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সিলেটের ওই অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, ‘প্রচার লীগ, তরুণ লীগ, কর্মজীবী লীগ. ডিজিটাল লীগ ও হাইব্রিড লীগ আছে। কথা হাছা সংগঠনে কাউয়া ঢুকেছে।’
জানতে চাইলে সভাপতিমণ্ডলীর আরেক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ওবায়দুল কাদের এখন আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা। তার অবস্থান থেকে এসব নেতিবাচক বক্তব্য দেওয়া হলে অন্যরা আরও বেশি সমালোচনা করবে। এসব বক্তব্য দলীয় ফোরামে প্রযোজ্য।দলীয় ফোরামে আলোচনা করে আওয়ামী লীগে যারা অনুপ্রবেশকারী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
সম্পাদকমণ্ডলীর আরেক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আবার কোন বিশেষণ দেন, তার অপেক্ষায় আছি। কাউয়া, ফার্মের মুরগি পর্যন্ত যেহেতু এসেছে, মনে করছি আরও নতুন কোনও উপাধি খুব শিগগিরই আসবে।
পাঠকের মতামত: